বনসাই গাছ বানানোর নিয়ম ও যেভাবে করবেন বনসাই?

সম্মানিত পাঠক, আজকের বিষয়বস্তু হচ্ছে বনসাই গাছ বানানোর নিয়ম ও যেভাবে করবেন বনসাই। এবং কেন করবেন বনসাই এর উপকারিতা কি কি। এই পোস্টটি পড়ে আমরা বনসাই সম্পর্কে সকল ধারণা পাবো এবং নিজের মতামতটি তুলে ধরবো। আশা করি আমার এই পোস্টটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

বনসাই গাছ বানানোর নিয়ম

শক্ত কাণ্ড রয়েছে এবং গাছের ঝুড়ি নামে এমন কিছু গাছকে টবের মধ্যে নিজের মত শৈল্পিক আকৃতিতে গড়ে তুলে এবং সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করে উপস্থাপন করাই হলো বনসাই। এ সম্পর্কে সকল প্রকার ধারণা পেতে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

শক্ত কাণ্ড রয়েছে এমন গাছের বামনাকৃতি(স্বাভাবিক আয়তনের চেয়ে কম আয়তন বিশিষ্ট) করার শিল্পকে মূলত বনসাই বলা হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে বনসাই গাছ বলতে পাত্রের ছোট আকৃতির গাছকে বোঝায় আর সেই বনসাই কে বলা হয় একমাত্র লিভিং আর্ট বা জীবন্ত শিল্প। বনসাই এর পারিভাষিক অর্থ হল জীবন্ত ভাস্কর্য।

বনসাই গাছের পরিচর্যা

অনেক ক্যাটাগরির বা অনেক রকমের গাছ দিয়ে বনসাই করা হয়। তাই গাছ ভেদে অনেক প্রক্রিয়ায় পরিচর্যা ও যত্ন করতে হবে।সঠিক স্থান বা নিয়ম মেনে পানি প্রয়োজন মোতাবেক দেওয়া, সার দেওয়া, নির্দিষ্ট পরিমাণে আলো বাতাস পায় কিনা এদিকে খেয়াল রাখা। নিয়মিত ডালপালা কেটে রাখব তাহলে গাছের আকৃতিটাই ঠিক থাকবে। 
টবের মাটিতে কি এমন ভাবে রাখবো যাতে পারো অতিরিক্ত পানি হলেস্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্কাশন হতে পারে। এতে গাছের শিকড় গুলো ঠিক থাকবে এবং পচনের ভয় থাকবে না। গাছের আকৃতি বড় হলে সময়ই মত রিপট বা তার অবস্থান পরিবর্তন করব। ঘরের মধ্যে বা টেবিলের উপর যে সবগুলো স্থাপন করব সেগুলো নিয়মিত মুছে রাখবো যাতে দেখতে সুন্দর লাগে।

বনসাই করার উপযুক্ত গাছ

বনসাই করার জন্য আমাদের এমন গাছ বাছাই করতে হবে যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি গাছ থেকে ঝুড়ি নামে এবং শাখা প্রশাখা খুব কম বৃদ্ধি পায়। যেসব কাজের কান্ড শাখা-প্রশাখা শক্ত এবং মজবুত সেগুলো বনসাই করার জন্য উত্তম। যেমন
  • বকুল 
  • নিম 
  • শিমুল
  •  তেতুল 
  • বেল 
  • পেয়ারা 
  • ডালিম 
  • কমলা 
  • তুলসী 
  • বড়ই 
  • মেহেদী 
  • কৃষ্ণচূড়া 
  • দেবদারু 
  • কামরাঙ্গা 
  • আমলকি 
  • জবা 
  • রঙ্গন।  ইত্যাদি

বনসাই বট গাছ

বট গাছের মধ্যে অনেকগুলো ক্যাটাগরি রয়েছে যেমন: 
  • চাইনা বট 
  • জাপানি বট
  • পাইকর 
  • লাইকর
  • রাবার প্লান্ট।  ইত্যাদি 
আমরা বটগাছ নামে চিনি। এসব গাছগুলো বনসাই এর জন্য উপযুক্ত। কারণ কান্ডগুলো শক্ত খুব কম সময়ে বাড়ে এবং এর আকৃতিটা গোলাকার বা নিজের মনের মতো করা অতি সহজ। তাই অন্যান্য গাছের চেয়ে বট গাছের বনসাই অন্যতম। 

এ ধরনের গাছগুলো ছোট আকৃতির হওয়ায় অফিস বা ক্লাসরুমে টেবিলের উপর সহজেই উপস্থাপন করা যায়। যা প্রাকৃতিক মাধুর্যের প্রতীক। বট গাছের পাতা গুলো একটু বেশি মোটা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি হই যে কারণে বংশের জন্য বটগাছ থেকে অনেকে বেছে নি আমরা।

কোথায় পাওয়া যায় বনসাই গাছ

বনসাই এমন একটি গাছ বা শিল্প যা কোন বাধ্য বোধের মধ্যে পড়ে না যে কোনটি করা লাগবে। এটির যেহেতু অনেকগুলো ক্যাটাগরি রয়েছে, তাই নিজের মনের মতো করে একটি করলেই হল। আমাদের বাড়ির আশেপাশে যেমন ছোট ছোট অনেক নিম গাছ বটগাছ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায় আমরা সেগুলোই সংরক্ষণ করে বনসাই করতে পারি।

 বৈদেশিক যেগুলো জাত রয়েছে সেগুলো আমরা আশেপাশেই অনেক নার্সারি এছাড়াও বর্তমান যুগে অনেক প্লাটফর্মে অফিশিয়াল পেজ বা গ্রুপ রয়েছে যেখানে অল্প কিছু দামের সমতুল্যে বা গিফট হিসেবে অনেক গাছ পাওয়া যায়। এতে নতুন বাগানিরা বনসাই করতে বা বাগান শুরু করতে অনুপ্রাণিত হয়।

বনসাই গাছের উপকারিতা

একটি বনসাই কে যদি আমরা নিজের মনের মত করে তৈরি করে সেটা বাজারজাত করি তবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। অনেকেই আছে অফিসরুম সুন্দর করতে বর্তমানে বনসাই শুধু আর্থিক উন্নতির জন্যই নয় বরং সৌখিন সংগ্রহের পাশাপাশি ঘর সাজাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এটা জীবনে একটা অন্যরকম শান্তি বয়ে আনে। 

অফিসের ডেক্সে বা ক্লাস রুমের টেবিলে সৌন্দর্য প্রতি সৌন্দর্যের প্রতীকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একটি ঘরের বাতাসকে শুদ্ধ করতে এবং বাসনকে দূষণমুক্ত করতেও বনসাই রাখতে পারি। উচ্ছন্ন মন মেজাজকে চনমনে রাখতে এই গাছ রাখি। একজন গাছ প্রেমির কাছে অন্যান্য গাছের চেয়ে বনসাই গাছ অধিক প্রিয়। কারণ এই গাছের যেসব আকৃতি গুলো হয় অল্পতেই মন কেড়ে নেয়।

সঠিক নিয়মে বনসাই করার পদ্ধতি

বনসাই করার জন্য সর্বপ্রথম এমন একটি গাছ নির্বাচন করে নিবো যেসব গাছ বাড়ে খুব ধীরে ধীরে এবং ঝুড়ি নামে। অতঃপর বেশি মাটি ধারণ করে এমন টবে গাছটি রোপন করতে হবে। প্রথমে শিকড় গুলো বেশি করে ছাড়িয়ে গেলে পরবর্তীতে ছোট বা প্লেট'কার পাত্রে রূপান্তরিত করে নেব। এদের নিচে শিখর গজবে কম এবং ডাল থেকে ঝুড়িগুলোর নামবে খুব বেশি গাছের রূপটি বেশ সুন্দর দেখার মত হবে।

বনসাই এর জন্য সর্বোত্তম মাটি (মিডিয়া) হল দোআঁশ মাটির সাথে পরিমাণমানগুলো: কম্পোস্ট আধা কেজি হাড়ের গুঁড়ো ৫০ গ্রাম খড়ি মাটি গুড়া ৫০ গ্রাম, ইটের গুড়া ১৩০ গ্রাম এবং কাঠের ছাই প্রায় ৭৫ গ্রাম মত।
শুধুমাত্র কাটলেই যে বনসাই যে হয় তা না, পছন্দ মতন নিয়মিত অতিরিক্ত ডাল-বালা কেটে নিজের মত একটি সেফ/আকৃতি করা এবং এ বিষয়ে ধ্যান ধারণা সবসময় সজাগ রাখা। বনসাই এর মূল ভিত্তি।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url